রাবণের স্বর্ণলঙ্কা কিভাবে তৈরি করেছিলেন বিশ্বকর্মা? | Golden Lanka was Built By Vishwakarma
ইয়াহু! জাস্ট সাত দিন আগেই রাজ্যের ব্রিজ আর রাস্তার অবস্থা চেক করিয়া গিয়াছেন বিশ্বকর্মা, মেকানিক্যাল এঞ্জিনিয়ারদের গ্র্যান্ডমাস্টার। আর কৈলাসে গিয়া মাকে এই বছরের ব্রিজ এবং রাস্তার ব্যাপারে ব্রিফ করিয়া দিয়াছেন। আর সপরিবারে মাতৃ-আগমনের পূর্বে রাজ্যে ব্রিজের অবস্থা চেক করাইয়া লওয়া আমাদিগের নিজ-সেফটির জন্যই দরকার। না হইলে, সম্পূর্ণ পরিবারসহ (যাহার মধ্যে কিছু জন আবার ওভার-ওয়েট) মাতা ব্রিজে আরোহণ করিলে যদি আবার কিছু ঘটে…
তাই, বিশ্বকর্মার এই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করিয়াই মাতা তাঁহার পোঁটলা-পুঁটলি, কসমেটিক্স বক্স ইত্যাদি প্যাক করিতেছেন। তো, ব্রিজের কথা ছেড়ে, আজ আমরা দেখে আসি বিশ্বকর্মার ‘স্বর্ণলঙ্কা’ তৈরির ঘটনা…
তখন শিবের জাস্ট বিয়ে হয়েছে উইথ হিমালয়দুহিতা। আর অষ্টমঙ্গলা পার করে, পার্বতী সবেমাত্র শ্বশুরঘর কত্তে এসেছেন কৈলাসে। সাদা সাদা ধু ধু পাহাড় চাদ্দিকে, তার মাঝখানে হু হু কুল কুল বাতাস খিলখিলাচ্ছে। এদিকে পার্বতী যতোই বাচ্চা থেকে হিমালয়ে বড় হন, কিন্তু বাপের বাড়িতে অ্যাট লিস্ট রাজপ্রাসাদ ছিলো, প্লাস সেন্ট্রাল রুম হিটিং তো ছিলোই, তাই অতটা ঠাণ্ডা মোটেও লাগতো না। কিন্তু লাভ ম্যারেজ করে, কৈলাসে এসে ঠাণ্ডায় যে দাঁতকপাটি লাগছে। এরেই কয় প্রেমের গুঁতো!! তখনো কৈলাসের ওয়েদার পার্বতীর যে ভালোমতো অ্যাডজাস্ট হয়নি, সেটা শিব ভালোই বুঝতে পারছেন। নিজে তো গাঁজা খেয়ে থাকেন, আর বডি মাস্ক হিসাবে ছাই মাখেন, প্লাস পরনে রিয়্যাল লেদার ড্রেস, তাই অতটা ঠাণ্ডা টেরও পাননা। কিন্তু পার্বতীর ঐ হাড়হিম করা কষ্ট দেখে শিবের বড্ড কষ্ট হলো। যতোই হোক, সদ্য কচি বউ!
তাই ভেবেচিন্তে বিশ্বকর্মাকে একদিন ডেকে, শিব পার্বতীর জন্যে একটি ঘ্যামাঞ্চকর প্রাসাদ সেটআপ করার কথা বললেন। অবশেষে, অনেক ড্রাফট কাটাকুটি হবার পরে, একটি প্ল্যান ফাইন্যাল হলো। নাম দেওয়া হল তার ‘স্বর্ণপ্রাসাদ’। এই স্বর্ণপ্রাসাদের ডেমো মডেলখানা দেখেই তো ত্রিভুবন ফিদা! বিশ্বকর্মাও হেব্বি হ্যাপ্পি! আফটার অল অনেক দিন বাদে একটা ঘ্যামাঞ্চকর কাজ উঠেছে, যেটা বিশ্বকর্মার সি.ভি.-তে বেশ হাইলাইট করার মতো। তাই প্রাণ ঢেলে, নির্ভেজাল এ ক্লাস অম্বুজা সিমেন্ট ব্যবহার করে, সেনকো গোল্ডের ২৪ ক্যারেট সোনার বাট ইউজ করে, খাড়া করলেন স্বর্ণপ্রাসাদ। কিছুটা সোনা বেঁচে গিয়েছিলো লাস্টে, তাই সেটা দিয়ে ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পল পার্বতীর একখানা সোনার শাড়ি লাস্টে তৈরি করে দিলেন। অকেশনালি বাপের বাড়ি যাওয়ার সময়ে পার্বতী সেটা পরবেন ঠিক করলেন। (ইনফ্যাক্ট, কয়েক বছর আগে তো একবার সেটা পরেই বাপের বাড়িতে ঘুরতে এসেছিলেন মাতা।)
ত্রিভুবন মাত! এমন ফাটাফাটি প্রাসাদ এর আগে কেউ দেখেনি। গোল্ডেন প্রাসাদ+ গোল্ডেন শাড়ি-পার্বতীর দিল ব্যাপক খুশ! আর বৌয়ের সেই খুশির ছোঁয়া লেগেছে শিবের প্রাণেও। তাই, ঠিক করলেন, বিশ্বকর্মার সাফল্যের এই সেলিব্রেশন পার্টি অ্যান্ড নতুন প্রাসাদের গৃহপ্রবেশ- দুটোই একসাথে অ্যারেঞ্জ করবেন। সেখানে স্পেশ্যাল অনার দেওয়া হবে বিশ্বকর্মাকে। আর স্পন্সরশিপের জন্যে যদি সেনকো গোল্ডকে রাজি করানো যেতে পারে, তাহলে ইভেন্টটা বেশ গ্লোরিয়াসও হবে, চাই কি- আনন্দবাজার কভার করতেও আসতে পারে। তাই শুনে পার্বতীও সঙ্গে সঙ্গে ডিসাইড করে ফেললেন- সেই গৃহপ্রবেশের অনুষ্ঠানেই প্রথমবার গোল্ডেন শাড়ীটাও পড়বেন। এবার অ্যারেঞ্জমেন্টের লিস্টি!
এদিকে, ‘ধীরে ধীরে সেই বার্তা রটি গেলো ক্রমে’, ত্রিভুবনে; আর স্বর্ণপ্রাসাদের কথা স্পেশ্যাল স্পাই মারফৎ গিয়ে পৌঁছল লঙ্কায় রাবণের কানে। রাবণ ছিলেন একের নম্বরের শিবভক্ত সেটা আপনারা জানেন। প্রথমে প্রাসাদের ডেভেলপমেন্টের টাইমে রাবণ অতোটা ইম্পর্ট্যান্স দেননি নিউজটায়, কারণ ব্যোমভোলা গুরুদেবের স্থাবর সম্পত্তির কথা তো আর ওনার অজানা নয়। তাই, কি-ই-বা এমন হচ্ছে – ভেবে অতো মাথা লাগাননি। কিন্তু তারপর দেখলেন এই গোল্ডেন ইভেন্ট নিয়ে ত্রিভুবনে এশিয়া কাপের ইন্ডিয়া-পাকিস্তান ম্যাচের থেকেও চরম উত্তেজনা ঝিলমিলাচ্ছে। ফাইন্যালি এবার যখন গুরুর অ্যাড্রেস থেকে গৃহপ্রবেশের ইনভিটেশনওলা গোল্ডেন কার্ডখানা এসে পৌঁছল- তখন রাবণ ভাবলেন- দেখতেই হচ্ছে একবার ব্যাপারখানা ইনভেস্টিগেট করে!
কথামতো, গৃহপ্রবেশের দিন রাবণ এসে পৌঁছালেন কৈলাসে। এসে দেখেন, এলাহি ব্যাপার! পুরো কৈলাসের গেট আপই বদলে গেছে এই স্বর্ণপ্রাসাদের গ্ল্যামারে! সব দেবতারা একবাক্যে ধন্য ধন্য করছেন প্রাসাদখানা দেখে। শিব আর পার্বতীর মুখে হাসি আর ধরছে না! আর বিশ্বকর্মাকে তো এক্কেবারে জওয়ানের শাহ্রুখ খানের মতো ভি.ভি.আই.পি. ট্রিট্মেন্ট দেওয়া হচ্ছে। আফটারঅল, ওনার হাতেই তো তৈরি! দেখে শুনে, মনের কোণে সামান্য একটু পিঁপড়ে কুটুস কামড়ালো রাবণের। তাই মুখ একটু শুকনো করেই ডিনার করলেন। এবার বাড়ি যাবার সময়ে গুরুদেবকে গুডনাইট জানাতে গেলেন রাবণ। শিব এর মাঝখানে নোটিশ করেছিলেন রাবণের হাঁড়িমুখ, কিন্তু তখন গেস্টদের ম্যানেজ করার ফাঁকে রাবণকে জিজ্ঞাসা করতে পারেননি, কি কারণে রাবণের দিলে এত্ত দুঃখ! এখন বাড়ি যাবার সময়ে রাবণকে কিছু রিটার্ন গিফট দেওয়া ভদ্রতার ম্যাটার। আবার রাবণ ব্রাহ্মণ, তাই ভোজনের পরে দক্ষিণাটাও দেওয়া দরকার। তাই, এখন একটু হাত ফাঁকা হতে, রাবণকে বললেন- ‘বলো বৎস ! তুমি দক্ষিণা হিসাবে কি চাও?’
ওমা! রাবণ দেখলেন মেঘ না চাইতেই জল! তিনি জানেন গুরুদেব কেমন এক কথার মানুষ! তাই একবাক্যে চেয়ে বসলেন, স্বর্ণপ্রাসাদখানা! গুরুদেব প্রথমে একটু থমকালেন। তাপ্পর বুঝলেন, রাবণের একবার যখন চোখ পড়েছে, তখন যেভাবেই হোক, রাবণ সেটা নেবেই! এইতো কিছুদিন আগে, শিব লঙ্কায় যেতে চাইছিলেন না বলে রাগ করে রাবণ পুরো কৈলাসটাই উঠিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো। তখন সেবারে নিজের একটা লিঙ্গমূর্তি দিয়ে ব্যাপারটা লাস্টে কোনোমতে সাল্টে দিতে হয়েছিলো। এবারেও সেই রকম কিছু একটা ত্যাড়াব্যাঁকা হবার আগে, ভালোয় ভালোয় প্রাসাদখানা দিয়ে দিলেই ভালো! এত্ত কিছু ভেবে, শিব যেই বললেন- ‘নিয়ে যাও’, অমনি রাবণ প্রাসাদটি কাঁধে তুলে স্টার্ট করলেন জার্নি। হাঁ-হাঁ করে পার্বতী আর দেবতারা ছুটে এলেন, কিন্তু লাভ কি আর! শিব ব্যাপারটা সবাইকে ভালোয় ভালোয় বুঝিয়ে, বললেন চেপে যেতে। তবে পার্বতীর যে প্রস্তাবটা তেমন ভালো লাগেনি, সেটা তো বুঝতেই পারছেন, তাই না!
অবশেষে, রাবণ সেই সোনার প্রাসাদখানি নিয়ে গিয়ে লঙ্কায় সেট করলেন, আর সেই থেকে বিশ্বকর্মার তৈরি স্বর্ণপ্রাসাদের গুণে লঙ্কার নাম হয়ে গেলো ‘স্বর্ণলঙ্কা’।