The most popular entertaining gag site in India

NABA PURAN

চুরি করে শাস্তি পেয়েছিলেন মা লক্ষ্মী

সত্যযুগ। দিনরাত শেষনাগের ম্যাট্রেসে শুয়ে শুয়ে, আর ল্যাদ খেয়ে খেয়ে, নারায়ণের কোমরে বড্ড ব্যাথা হয়েছে। তাই একদিন তিতি-বিরক্ত হয়ে বিছানায় উঠে বসে ভাবলেন, অনেক দিন মর্ত্যে সারপ্রাইজ ভিজিট করা হয়নি, একবার এক চক্কর ঘুরে এলে কেমন হয়? বেশ নিজের চোখে সব কিছুর হালৎ-হকিকত দেখে নেবেন, প্লাস আউটিংও মন্দ হবে না। সাতপাঁচ ভেবে, পরদিন সক্কাল সক্কাল, কাক ডাকারও আগে ঘুম থেকে উঠে নারায়ণ নিজের ব্যাকপ্যাক গোছাচ্ছেন, এমন সময়ে ঘরে ঢুকলেন মা লক্ষ্মী। ঢুকে, নারায়ণকে বোরিয়া-বিস্তর প্যাকিং করতে দেখে, লক্ষ্মী অবাক হয়ে গেলেন।

যে মানুষ দিন রাত অনন্তশয্যায় শুয়ে নাক ডাকায়, হাজার ডেকে ডেকেও সাড়া পাওয়া যায় না, সে সাত সকালে উঠে কোথায় যাচ্ছে? বৌ-এর একগাদা কোশ্চেনের একটাই উত্তর এলো- ‘চেঞ্জে, শান্তি?’ কিন্তু, এক কথার উত্তরে কি পৃথিবীতে কোনোদিন কোন মহিলা সন্তুষ্ট হয়? যথারীতি, লক্ষ্মীও ব্যতিক্রম নন। তাই, পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে একের পর এক প্রশ্ন ছুটে আসতে থাকে নারায়ণের দিকে – ‘কবে ঠিক করলে? জানাওনি তো? নাকি জানানোর প্রয়োজনও মনে করো না? সারাদিন পা টিপে টিপে আমিও ক্লান্ত। আমারও কি চেঞ্জের দরকার পড়ে না?’ এবং শেষমেশ লক্ষ্মীর ডিসিশন – ‘আমিও যাবো।’ বৌ-এর প্রশ্নবাণে জর্জরিত নারায়ণ তখন বাই-হুক-অর-বাই-ক্রুক ,- লক্ষ্মীকে চুপ করাতে পারলে বাঁচেন! তাই ঝটাকসে বলে দিলেন, ‘স্বচ্ছন্দে চলো, শুধু উত্তরদিকে তাকাবে না এবং—’ লক্ষ্মীর ‘কেন?’ ভেসে আসার আগেই সজোরে চিল্লিয়ে নারায়ণের বাউন্সার-‘কেন-র কোন উত্তর হয় না। তাই, আমার সাথে মর্ত্যে যেতে হলে – এই বিষয়ে আর অন্তত কোনো প্রশ্ন করবে না।’ ওকে।

অতঃপর। ব্যাকগ্রাউন্ডে বেজে উঠলো কবি গুরুর উদ্বোধন সঙ্গীত-‘আমাদের যাত্রা হলো শুরু।’ দুজনে স্টার্ট করলেন–‘যাত্রা’।

কাট টু। মর্ত্য। ডিফারেন্ট টাইমজোন হওয়ার জন্যে এখানে তখন ‘পাখি সব করে রব, রাতি পোহাইলো, কাননে কুসুম কলি সকলি ফুটিলো’। আকাশে ‘রবিমামা দেয় হামা গায়ে রাঙা জামা রে’। চাদ্দিকে হেব্বি শান্তির হাওয়া বইছে। এক কথায়-সুপ্রভাত! মিষ্টি হাওয়ায় মা লক্ষ্মীর গায়ের এবং মনের স-অ-ব জ্বালা জুড়িয়ে গেলো, অর্থাৎ ‘দিল গার্ডেন গার্ডেন’ হয়ে গেলো। হেব্বি খুশি মনে মা লক্ষ্মী এদিক-ওদিক, চাদ্দিকে তাকিয়ে দেখছেন। ঐ যাহ, উত্তর দিকে তাকানো বারণ ছিলো না? ধুস, মা লক্ষ্মীর মনেই নেই সেই কথা!

উত্তর দিকে, এক ‘কাননে’, তখন সত্যিই ‘কুসুম কলি’ ফুটেছে, এবং তাদের রঙের বাহারে ‘লাল নীল সবুজের মেলা বসেছে’। জাস্ট যশ চোপড়ার গানের সিনের মতো ফাটাফাটি লাগছে! ব্যাক গ্রাউণ্ডে বাজছে-‘দেখা এক খোয়াব তো ইয়ে সিলসিলে হুয়ে…’আহ! পুরো সিনেম্যাটিক সিচুয়েশান! পার্থক্য শুধু, নারায়ণ বাগানে নেই। তা হোক! বাগানে ঘুরতে ঘুরতে মা লক্ষ্মী গুণগুণিয়ে সুর ভাঁজছেন, আর টুপ করে নারায়ণকে গিফট করবেন বলে একটা সুন্দর ফুল তুলে নিলেন।

কিন্তু একি! নারায়ণকে ফুল গিফট করতে গিয়ে লক্ষ্মী দেখলেন, নারায়ণ বেজার মুখে বসে আছেন। লক্ষ্মীকে দেখেই খেঁকিয়ে উঠলেন-‘বারণ করেছিলাম না উত্তরে যেতে?’ তার ওপরে লক্ষ্মীর হাতে ফুল! ‘ভালো! ছোটবেলায় বর্ণপরিচয়ে পড়োনি – না বলিয়া পরের দ্রব্য লইলে চুরি করা হয়?’ নারায়ণের খ্যাঁকানি শুনে লক্ষ্মীর এবার জোর কান্না এলো। আফটার অল, নারায়ণের জন্যেই তো ফুল তুলেছিলেন দেবী!

লক্ষ্মীর কান্না দেখে এতক্ষণে এবার নারায়ণেরও মন খারাপ হয়ে গেলো। কিন্তু কি করা যাবে! চুরির শাস্তি তো পেতেই হবে! তাই শান্ত স্বরে, কান্না ভেজা গলায় নারায়ণ লক্ষ্মীকে বললেন, ‘ওকে ওকে! এবার প্লিজ কথা শোন। এই বাগানের মালির কাছে তুমি তিন বছর থাকো, কাজ করো। তিন বছর পরে আমি স্বর্গ থেকে তোমার কাছে আবার রথ পাঠাবো। কিন্তু এখন তোমায় শাস্তি না দিলে, পৃথিবীবাসী বুঝবে না চুরি করা অপরাধ।’ ( নিজের মনে নারায়ণের বিড়বিড়ানি -‘প্লাস, বরের বারণ না শোনা আরও বড়ো অপরাধ’! )

চুপচাপ মাথা নাড়লেন মা লক্ষ্মী। চোখে জল। বেশ বেলা হয়েছে, কিছু খাওয়াও হয়নি সকাল থেকে।  খিদেও পেয়েছে বেশ ভালোই! নারায়ণ মন খারাপ করে বৈকুণ্ঠে চলে গেছেন কখন! এখন নিজের ম্যাও লক্ষ্মীকে নিজেকেই সামলাতে হবে! অগত্যা, চোখের জল মুছে, লক্ষ্মী এবার গরীব মেয়ের গেট-আপ নিয়ে, এসে দাঁড়ালেন সেই বাগানের মালি-কাম-মালিক মাধবের কুঁড়ে ঘরের দোরগোড়ায়!

সকালবেলা দরজায় ঠক ঠক শুনে মাধব এসে দেখলেন- একটি খুব মিষ্টি লাইক জাম, বাট গরীব লাইক আম (আম-আদমির মতোই গরীব আর কি!) মেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বাইরে। নরম সুরে লক্ষ্মী বললেন,’আমি তোমার বাড়ির, বাগানের সব কাজ করে দেবো। শুধু আমায় একটু খেতে দাও, আমি সকাল থেকে কিচ্ছু খাইনি। আর প্লিজ আমায় একটু তোমাদের ঝুপসের এক কোণে থাকতে দাও’। মাধব খুব নরম মনের মানুষ ছিলেন। ঝুপড়িতে থাকতেন তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলে আর তিন মেয়ে – সব্বাই বাগানেই কাজ করে খুব কষ্টে দিন চালাতেন। কিন্তু লক্ষ্মীকে দেখে তাঁর খুব দয়া হলো। তাই নরম গলায় লক্ষ্মীকে বললেন, ‘বোন, আমার আয় খুব কম। কিন্তু আমার তিনের বদলে চার মেয়ে থাকলেও তো আমায় তাদের খেতে দিতে হতো। তাই, মেয়ে হিসাবে যদি আমাদের রুখি-শুখি রুটি খেয়ে থাকতে পারো, তো ওয়েলকাম ইন আওয়ার গরীব কুটিয়া’। খুব খুশি মনে লক্ষ্মীদেবী এসে ঢুকলেন মাধবের ঝুপড়িতে।

কাট থ্রি। তিন বছর কেটে গেছে। এই তিন বছরে মাধবের নিজের জমি-জায়গা, পাকা বাড়ি মানী হাভেলি, বৌ- মেয়ের গয়না- সব হয়েছে। কিন্তু মা লক্ষ্মী এখনো মাধবের বাগানে কাজ করেন সেই প্রথব দিনের মতো। মাধব সব সময়ে মনে করেন সেই ফার্স্ট ডে ফার্স্ট মর্নিং আর সেই ইভনিং, যেদিন সন্ধ্যেবেলায় কাজ করে ফেরার সময়ে মাধব এতো টাকা পেয়েছিলেন, তিনি একটি গরু কিনে আনতে পেরেছিলেন। আর সেই ঘটনা ঘটেছিলো সেই দিন, যেদিন সকালে প্রথম ঐ মেয়েটি মাধবের কুঁড়ে ঘরের সামনে এসে আশ্রয় চেয়েছিলো। নাহ! মাধবের সব উন্নতি ঐ মেয়েটি আসার পর থেকেই। আহা! মেয়ে তো নয়, যেন দেবী!

দিন যায়, ঘুম পায়। হোম ডেলিভারির ঠেলায় ওদিকে নারায়ণের প্রাণপাখি, মানে পেটপাখির অবস্থা টাইট! আর গরূড়ের যত্ন-আত্তি, শেষ-নাগের ম্যাট্রেস ঝেড়ে-ঝুড়ে রেডি করা, এসব কি চাড্ডিখানি কথা বাপু! হে লক্ষ্মী! এবার নারায়ণ লক্ষ্মী-ছাড়া হওয়ার ঠেলা বুঝছেন! ওদিকে একদিন সন্ধ্যাবেলা। ঘরে ঢোকার সময়ে মাধব দেখলেন, ঘরের সামনে হেব্বি গ্ল্যামারাস শাড়ি গয়নায় সাজুগুজু করে ঝক্কাস এক দেবী দাঁড়িয়ে আছেন। প্রথমে মাধব কনফিউজড হয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু পরে ভালো করে মুখ দেখে বুঝলেন, ইনি মাধবের ঘরে আশ্রিতা সেই মেয়ে। আরও ভালো করে, হাতের পদ্ম আর স্বর্ণঘড়া দেখে মাধব বুঝলেন, ইনিই মা লক্ষ্মী।

এতক্ষণে বাড়ির সব্বাই এসে জড়ো হয়েছে গেটের সামনে, জোড় হাতে। সব্বাই ভয়ে ফ্যাকাশে- না জানি, মা লক্ষ্মীকে দিয়ে কাজ করানোর অপরাধে কত্ত বড় অভিশাপ না পেতে হয়! কিন্তু মা লক্ষ্মী হেসে বললেন, ‘মাধব তুমি খুব ভালো। তোমার মন ব্লটিং পেপারের মতো সাদা, আর দয়ায় ফুলফিল। তাই আমি কিচ্ছু রাগ করিনি। তিন বছর আগে আমি চুরি করেছিলাম, তাই তার শাস্তি হিসাবে আমি তোমার কাছে কাজ করেছি এতোদিন। কিন্তু বাড়িতে, একা হাতে হোম ডেলিভারিতে নারায়ণের আর পোষাচ্ছে না, তাই আজ আমার স্বামী শ্রী নারায়ণ স্বর্গ থেকে এত্তেলা পাঠিয়েছেন, এবার স্বর্গে ব্যাক করতে হবে। আর তোমার বাড়িতে সব সময়ে এরকম টাকা পয়সা, সম্পদ থাকবে, সো…ডোন্ট ওরি’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *