গণেশের বাহন ইঁদুর কেন? | Why did Lord Ganesha adopt the rat as his vehicle?
দেবরাজ ইন্দ্রের সভার প্রাইমারি অ্যাট্রাকশান রম্ভা, মেনকা, উর্বশী ইত্যাদি ছম্মকছল্লোদের ভার নেবার জন্য একদল মেল চিয়ার-লিডারও ছিলো। ইন্দ্র ভালোবেসে এই স্পেশ্যাল মেলদের নাম দিয়েছিলেন গন্ধর্ব। এরকম এক স্যান্ডি সাহার নাম ছিলো ক্রৌঞ্চ। শুধু ইন্দ্রের সভায় নেচে যা মাইনে পেতেন, তাতে কুলোতো না বলে সাইড-বিজনেস হিসাবে প্রাইভেটে ডান্স ইন্সটিটিউটও খুলেছিলেন। সেখানে ‘ডান্স বাংলা ডান্সের’ অডিশানে পাশ করার জন্য প্রয়োজনীয় স্টেপস, অর্থাৎ হাত-পা-ছোঁড়া শেখানো হতো। একদিন এই রকমই তিড়িংবাজি শেখাতে শেখাতে দুম করে তাঁর পা মহামুনি বামদেবের পায়ের আঙুলে লেগে গেলো ( বোধহয় মুনি নিজের ভাইপো/ ভাইঝি কাউকে নিতে এসেছিলেন ব্যাচ থেকে)। ব্যস! মুনি তো রাগে খেত থেকে তোলা পাকা টোম্যাটো-রেড হয়ে গেলেন। আর মুনিদের তো হাতে মাইক্রোওয়েভ গরম অভিশাপ একদম রেডিমেড থাকে। ইনস্ট্যান্ট ডেলিভারি মারলেন ক্রৌঞ্চের দিকে,-“যা ব্যাটা! তুই পরের জন্মে ইঁদুর হবি। আর এরকমই তিড়িং বিড়িং লাফাবি”।
শুনেই তো ক্রৌঞ্চের ফেস এক্কেবারে যশ দাশগুপ্ত থেকে কাঞ্চন মল্লিক হয়ে গেলো। একেবারে হাঁউ-মাউ করে কেঁদে উঠে সটান বামদেবের পা লটকে মাথা ঠুকতে লাগলেন ক্রৌঞ্চ। বামদেব তো প্রথমে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন,-কি জানি, ‘জোর কা ঝটকা’ খেয়ে মাথার ইস্কুরুপ ঢিলে হয়ে গেলো কিনা। যেরকম মুখ ঘষছে, পায়ে কামড়ে-টামড়ে দিলে তো আবার গরীব বামুনকে পয়সা খরচ করতে হবে জলাতঙ্কের ইঞ্জেকশান দিতে। কিন্তু যখন দেখলেন, ব্যাটা কামড়াচ্ছে না, শুধুই কাঁদছে,- তখন একটু মায়াই হলো। তখন বামদেব নরম গলায় বললেন,-“সরি রে! একটু প্রেশার চড়ে গিয়েছিলো। তবে যা বলেছি পুরোটা তো ফেরাতে পারবো না। তুই পরের জন্ম থেকে গণেশের বাহন হবি। লাড্ডু তো পাবিই, সাথে পুজোটাও ফ্রি।” অন্তত কাটা ঘায়ে একটু হট বোরোলীন তো পড়লো। ‘যা জোটে তাই সই’ ভেবে তাও ক্রৌঞ্চ একটু শান্ত হয়ে আবার নাচ প্র্যাকটিসে মন দিলেন। সামনেই যে আবার জুনিয়ার সিজনের অডিশান আসছে!
যাইহোক, পরের জন্মে ক্রৌঞ্চ জন্মালেন ইঁদুরদের ফিমেল লিডার মা নেংটিশ্বরীর (তথ্য সৌজন্য – টেনিদা সমগ্র, কম্বল নিরুদ্দেশ) গর্ভে। মায়ের মতোই ছেলে হয়েছে। এক্কেবারে পাঁচটা কেঁদো বেড়ালের সাইজ। এই বিশাল জিম করা ফিগারের ঘ্যামে নেংটির তো আর ল্যাজই মাটিতে পড়ে না। একদিন ব্যাটা গেলো মহর্ষি পরাশরের আশ্রমে চুকলিবাজি করতে। গিয়েই নিজেকে ইন্টিরিয়ার ডিজাইনার ভেবে, ডিরেক্ট আশ্রমের খড়ের চালখানাকে বাপের সম্পত্তি ভেবে নিজের মতো করে ফুটো-ওলা ডিজাইন করে দিলো। এত্ত কাজ করে খুব খিদে পেয়েছে ভেবে ঢুকলো গিয়ে ফুড-স্টোরেজে। পেট ভরে চাল,গমের টিন ফুটো করে ভাঁড়ারের পিণ্ডি চটকে লাঞ্চ সেরে নিলো। ভরাপেটে খুশিমনে এবার নিজেকে ভুল্ভুলাইয়ার মঞ্জুলিকা ভেবে সারা ঘরে দৌড়ে বেড়াতে লাগলো।
এদিকে নেংটির ছুঁচোবাজির জ্বালায় সবথেকে বেশি প্রবলেমে পড়েছেন ঋষিপত্নী মিসেস বৎসলা। নতুন বৈশাখ পড়তে দেরি আছে, কালোবাজারিদের সাদাবাজারি করার সিজন এখনো স্টার্ট হয়নি তেমন করে। তাই জাস্ট কয়েকটা দিনের জন্য রেস্ট নিতে কৈলাস থেকে গনেশ ঠাকুর চেঞ্জে এসেছেন বন্ধুর কাছে। এত্তদিন পরে দেখা, কোথায় বন্ধুর সাথে দু-পাত্তর ভদকা উইথ হালকা লেবু মেরে সুখ-দুঃখের গিভ-এন-টেক হবে, আবার বন্ধু তপস্যা করতে বেরিয়ে গেলে ফাঁকতালে হালকা করে বৌদিবাজি হবে, তা না, কোথাকার একটা নেংটির পেছনে ডিয়ার বৌদিকে দৌড়ে বেড়াতে হচ্ছে অল টাইম! একবার তো নেংটি টা দৌড়ে যাবার সময় ল্যাজটা ভুঁড়িতে সুড়সুড়িয়ে গেলো! যেন গনেশবাবুর ভুঁড়িকে হাল্কার ওপর টুসকি মেরে খিল্লি করে গেলো!!!
বৌদির সামনে এমন অপমান!! রাগে গনেশবাবু হাতের সেনকো জুয়েলার্সের মোটকা পাশাটা ছুঁড়ে মারলেন নেংটির দিকে। এক লাফে নেংটিটা পালাতে গিয়েও আটকে গেলো। পাশাটা এক্কেবারে ঘাড়ের মধ্যে আটকে ধরেছে যে! গয়না যখন অস্ত্র!
বৎসলা একটা ইঁদুর মারা কল নিয়ে এলেন নেংটিটাকে ধরবেন বলে। ঋষি পরাশরের কিন্তু মত – ওর লেজ কেটে দেওয়া হোক। ওর নেংটিত্ব ঘুচিয়ে দেওয়া হোক। কিন্তু তাহলে ব্যাপারটা মানেকা গান্ধীর দরবারে পৌঁছে গেলে আবার মুশকিল! তখন গনেশবাবু পকেট থেকে একটা মেনটোস বের করে মুখে পুরে দিতেই ওনার দিমাগ কি বত্তি জ্বলে উঠলো। আর উনি ধপ করে নেংটির পিঠেই চেপে বসলেন প্লেগের ভয় না করে। কিন্তু চাপের চোটে বেচারি নেংটি একেবারে চিঁড়ে-চ্যাপ্টা হয়ে কঁকিয়ে উঠলো-“প্রভু! আপনি যা বলবেন তাই করবো, কিন্তু প্লিজ একটু ওয়েট কমান”। তখন গণেশঠাকুর মন্ত্রের জোরে সাইজ না কমিয়ে ওয়েট কমালেন, আর সেই থেকে ইঁদুর গণেশের বাহন হয়ে গনেশকে পিঠে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।